সর্দি কাশির সাতকাহন বারবার কেন আক্রমণ-

শীতের এই সময়ে বাবা-মায়ের প্রধান চিন্তা বাচ্চার সর্দি কাশি। আমার আগের আলোচনায় বলেছিলাম যে সর্দি কাশির প্রধান কারণ প্রায় দুশোর ও বেশি ভাইরাস এবং এদের একটার পর একটার আক্রমণে শিশুদের কয়েকদিন পরপরই ঠান্ডা কাশি লাগতে পারে। এছাড়া আরো কি কিছু কারণ আছে ঘনঘন সর্দি কাশি হওয়ার?

হ্যাঁ আছে। কিছু কিছু কারণ আছে যা ভাইরাসের আক্রমণের হার এবং তার ফলে সর্দি কাশি হওয়ার ঝুঁকি কে বাড়িয়ে দেয়।

স্থান কাল ভেদে সর্দি কাশির আক্রমণ বাড়তে পারে।যেমন বছরের যে কোন সময়ের চেয়ে শীতে সর্দি কাশির প্রকোপ বাড়ে বেশি। কেন? শীতকালে কয়েকটি ঘটনা ঘটে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায় এবং ধুলাবালি বেড়ে যায়। এই ধুলাবালি পূর্ণ,শুষ্ক,ঠান্ডা পরিবেশ বিভিন্নভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে বেড়ে যায় ভাইরাসজনিত ঠান্ডা কাশি সংক্রমণ। এছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ঘরের দরজা জানালা সব সময় বন্ধ রাখার ফলে বাইরের বাতাস এবং রোদের আলো সহজে ঘরে ঢুকতে পারে না।এই বদ্ধ ঠান্ডা পরিবেশে ভাইরাস বংশ বৃদ্ধি করে এবং সবাইকে আক্রমণ করে। এদের মধ্যে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে স্বাভাবিকভাবে শিশুরা এর শিকার হয় বেশি। তাছাড়া বেশি গরমে বাচ্চাদের ঘামের ফলেও সর্দি কাশি হতে পারে।

এবার আসি স্থান বা পরিবেশ কিভাবে সর্দি কাশি প্রবণতাকে বাড়ায়-

অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ বা জনাকীর্ণ পরিবেশে সর্দি কাশির ভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজনের থেকে আরেকজনের কাছে সহজে ছড়াতে পারে। বিশেষ করে একসাথে ছোট একটি জায়গায় অনেক বেশি লোক একত্রে অবস্থান সর্দি কাশির ঝুঁকি বাড়ায় যেমন স্কুল, মাদ্রাসা,হাসপাতাল। এমনকি এক বাসায় বা একটি রুমে একসাথে বেশি মানুষ থাকলেও শিশুর সর্দি কাশির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে একই পরিবেশে কোন কোন শিশুর ঠান্ডা কাশি প্রবণতা কি অন্যদের চেয়ে বেশি হতে পারে? হ্যাঁ পারে।
অপুষ্টি বা রক্তশূন্যতার কারণে শিশুদের যদি স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কম থাকে তাহলেও সর্দি-কাশি প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। শিশু অপরিণত জন্মালে, জন্মের সময় ওজন কম থাকলে এমনকি শিশু যদি যথেষ্ট বা একদমই বুকের দুধ না খায় তাহলেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।

শিশুদের সর্দি কাশির আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে অ্যালার্জি। ঠান্ডা আবহাওয়া ধুলাবালি শুধু ভাইরাসের আক্রমণে বাড়িয়ে দেয় না, এলার্জিজনিত সর্দি কাশির প্রকোপও বাড়ায়। এই এলার্জিজনিত অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, টনসিলের প্রদাহের কারণে একটু বড় বাচ্চাদের এমনকি টিনএজ বয়সীদের ও ঘন ঘন সর্দি কাশি হতে পারে।

জন্মগত হার্টের ত্রুটি থেকে কি সর্দি কাশি হতে পারে?

বারবার সর্দি কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের বাবা মায়েরা অনেক সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে তাদের শিশুদের এই সর্দি কাশির কারণ হার্টের কোন সমস্যা কিনা।
হার্টের জন্মগত কিছু সমস্যা শিশু নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে একটি অন্যতম কারণ, সর্দি কাশির কারণ নয়। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণ বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হার্টের সমস্যা নির্ণয় করা যায়। সহজ সূত্র হচ্ছে আপনার শিশুর যদি স্বাভাবিক সর্দি কাশি হয় , শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক থাকে এবং সর্বোপরি যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনাকে আশ্বস্ত করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে এই সর্দি কাশি হার্টের সমস্যা জনিত কোন কারণে নয়।

সর্দি কাশির অন্যান্য কারণ কি হতে পারে?

কোন কোন সময় কিছু জ্বিন বাহিত রোগ বা জন্মগত ত্রুটির (সৌভাগ্যবশত যাদের হার খুবই কম ) জন্য বাচ্চাদের শ্বাসতন্ত্র প্রদাহ বা বারবার নিউমোনিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত সর্দি কাশি ছাড়া শিশুদের আরো অনেক সমস্যা থাকে। প্রয়োজনীয় তথ্য ও লক্ষণ বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগগুলো নির্ণয় করা যায়।

শেষ করার আগে আজকের আলোচনা সারসংক্ষেপ বলে যাই-

✴আমাদের মত ঘনবসতির ধুলাবালি পূর্ণ দেশে স্বাভাবিকভাবে শিশুদের সর্দি কাশির প্রবণতা বেশি।

✴ অপরিণত জন্ম,কম জন্ম ওজন,পর্যাপ্ত বুকের দুধ না খাওয়া ইত্যাদি কারণে শিশু অপুষ্টি বা রক্তশূন্যতায় ভুগলে সর্দি কাশি আরো বেশি হতে পারে।

✴এলার্জিজনিত সমস্যা শিশুদের এবং বড়দেরও ঘন ঘন সর্দি-কাশির একটি কারণ।

✴জন্মগত হার্টের ত্রুটি এবং বিভিন্ন জিন বাহিত ও মারাত্মক কিছু রোগে শিশুর নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে । সাধারণ সর্দি কাশি নয়।

👉 শিশুর সুস্থতার জন্য এই তথ্যগুলো নিজে জানুন এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *