শিশুর যত্নে সঠিক তথ্য জানতে হবে প্রচলিত ভুল ধারণা ভাঙতে হবে-

আজকে আলোচনা করব নেবুলাইজার নিয়ে। একটু সময় নিয়ে পড়লে পেয়ে যাবেন অনেক প্রশ্নের উত্তর।

সর্দি কাশির এই সময়ে নেবুলাইজার বা চলতি কথায় “গ্যাস দেওয়া” নিয়ে বাবা মায়ের মধ্যে দুই ধরণের ধারণা দেখা যায়।কিছু অভিভাবক এর ধারণা, সর্দি কাশি হলেই নেবুলাইজার দিতে হবে। আর একটা বড় অংশ নেবুলাইজার এর কথা শুনলেই আঁতকে উঠেন এই ভয়ে যে শিশু এতে করে নেবুলাইজার এ অভ্যস্ত হয়ে যাবে। দুটো ধারণাই ভুল।

প্রথম কথা হলো নেবুলাইজার হলো রোগীর শরীরে ওষুধ দেয়ার একটা মাধ্যম। খাবার ওষুধ বা ইনজেকশন ছাড়াও অনেক ভাবে আমরা ওষুধ দেই। যেমন চর্মরোগে মলম, চোখের, কানের বা নাকের অসুখে ড্রপ। তেমনিভাবে কিছু ওষুধ সরাসরি শ্বাসনালী বা ফুসফুসে প্রবেশ করানোর একটা কার্যকর মাধ্যম হলো নেবুলাইজার। তবে, এসব ওষুধের বেশিরভাগই মুখে বা কিছু ক্ষেত্রে ইনজেকশন এর মাধ্যমে দেয়া যায়। তাহলে আমরা নেবুলাইজার দিয়ে কেন দিব? এর কারণ হলো মুখে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ দিলে তা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে রক্তের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফুসফুসে পৌঁছে তার কাজ শুরু করবে। আর এই পথ চলায় কিছু ওষুধ অন্য অনেক জায়গায় চলে যাবে। তাতে দুটো ঘটনা হবে। প্রথমত, কিছ ওষুধ অপচয় হবে, কাজ শুরু করতে একটু দেরি হবে এবং ওষুধের কার্যকারিতা কিছুটা কমে যাবে।

দ্বিতীয়ত, কিছু অঙ্গে এই ওষুধের কিছু অনাকাঙ্খিত ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, যাকে আমরা বলি “সাইড এফেক্ট” । নেবুলাইজার ব্যবহার করলে এই ওষুধ সরাসরি শ্বাসনালী বা ফুসফুসে চলে যাবে, দ্রুত কাজ করবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই অনাকাঙ্খিত “সাইড এফেক্ট” কম হবে। আর কিছু ওষুধ আছে যেগুলো একমাত্র নেবুলাইজার এর মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।
এখন তাহলে মনে হতে পারে যে, তাহলে সর্দি কাশির হলেই নেবুলাইজার ব্যবহার করা ভালো। হ্যাঁ, নেবুলাইজার এর মাধ্যমে যে ওষুধ ব্যবহার করা যায়, তা যদি শিশুর প্রয়োজন হয় এবং খুব দ্রুত ফলাফল পেতে চাই, তালে এটা খুবই উপকারী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ সর্দি কাশিতে এই ওষুধগুলো লাগেনা। তাহলে কখন লাগবে নেবুলাইজার এর ব্যবহার। রোগের ইতিহাস, উপসর্গ এবং লক্ষণ দেখে তা নির্ধারণ করবেন আপনার শিশুর চিকিৎসক।
এবার আসুন বাবা মায়েদের সবচেয়ে টেনশন এর ব্যপারে। একবার নেবুলাইজার দিলে বারবার দিতে হবে কিনা বা তাতে বাচ্চার ক্ষতি হবে কিনা। চিকিৎসক যদি নেবুলাইজার ব্যবহার করতে বলেন, তবে বুঝতে হবে সেটা শিশুর চিকিৎসার প্রয়োজনে। যেমন, শিশুর যদি এ্যাজমার সমস্যা থাকে তাহলে নেবুলাইজার বার বার লাগতে পারে। এখানে নেবুলাইজার এ অভ্যাস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারেই ভুল। আর নেবুলাইজার ব্যবহারে যে ওষুধের বেশি কার্যকারিতা আর কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তা তো আগেই আলোচনা করেছি।
তবে নেবুলাইজার মেশিন বিশেষ করে মাস্কটির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ডাক্তার এর পরামর্শ মতো সঠিক ওষুধ সঠিক পরিমাণ এবং সঠিক নিয়মে দিতে হবে।
সুতরাং নেবুলাইজার নিয় অহেতুক ভীতি বা অপ্রয়োজনীয় নির্ভরতা আর নয় আর নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *